আসন্ন বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষ্যে ১৭টি বিশেষ ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এরমধ্যে শুধু আখেরি মোনাজাতের দিন চলবে ১৪টি ট্রেন।
মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) দুপুরে রেলভবনে বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রস্তুতি বিষয়ক এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. কামরুল আহসান।
রেলওয়ের মহাপরিচালক বলেন, শুধু ২ ও ৯ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) ঢাকা-টঙ্গী ও টঙ্গী-ঢাকা রুটে জুমা স্পেশাল-২টি ট্রেন চলাচল করবে। ৩ ও ১০ ফেব্রুয়ারি জামালপুর-টঙ্গী রুটে স্পেশাল-১টি ট্রেন চলাচল করবে।
আখেরি মোনাজাতের দিন ঢাকা-টঙ্গী রুটে ৫টি স্পেশাল ট্রেন; টঙ্গী-ঢাকা রুটে ৫টি স্পেশাল ট্রেন; টঙ্গী-ময়মনসিংহ রুটে ১টি স্পেশাল ট্রেন; টঙ্গী-টাঙ্গাইল রুটে ১টি স্পেশাল ট্রেন; ঈশ্বরদী-টঙ্গী-ঈশ্বরদী রুটে ২টি স্পেশাল ট্রেন চলাচল করবে।
টঙ্গী স্টেশনে সব ট্রেনের যাত্রা বিরতি
রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. কামরুল আহসান বলেন, বিশ্ব ইজতেমা-২০২৪ উপলক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ট্রেনে আসা মুসুল্লিদের যাতায়াত সুবিধার্থে টঙ্গী স্টেশনে সব ট্রেনের যাত্রা বিরতি করানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে আখেরি মোনাজাতের দিনগুলোতে শুধু ৪টি ট্রেন থামবে না।
তিনি বলেন, ১ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এবং ৮ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঢাকা অভিমুখী সব আন্তঃনগর, মেইল ও কমিউটার ট্রেন টঙ্গী স্টেশনে ৩ (তিন) মিনিট করে থামবে। আগামী ৪ ও ১১ ফেব্রুয়ারি (দুই পর্বের ইজতেমা) আখেরি মোনাজাতের দিন (সুবর্ণ, সোনার বাংলা, কক্সবাজার ও পর্যটক এক্সপ্রেস ব্যতীত) সব আন্তঃনগর, মেইল ও কমিউটার ট্রেনগুলো (আপ ও ডাউন) টঙ্গী স্টেশনে ৩ মিনিট করে থামবে।
মহাপরিচালক আরও বলেন, ৪ ও ১১ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের দিন ৪৯ নং বলাকা কমিউটার ট্রেন ৪টা ৪৫ মিনিটের পরিবর্তে ৫টায় ছাড়বে। ৪ ও ১১ ফেব্রুয়ারি (রোববার) ৭৯২/৭৯১ নম্বর বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেন বন্ধ থাকবে, তবে ৭৫৪/৭৫৩ নম্বর সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেন ৪ ও ১১ ফেব্রুয়ারি সাপ্তাহিক বন্ধের দিনও চলাচল করবে।আখেরি মোনাজাতের পরের দিন অর্থাৎ ৫ ও ১২ ফেব্রুয়ারি তারিখ ইজতেমা থেকে বহির্গামী টিকিটধারী যাত্রীদের ফেরত যাওয়া ও টঙ্গী স্টেশনে আরোহণের সুবিধার্থে আন্তঃনগর ট্রেনগুলো টঙ্গী স্টেশনে ৩ মিনিট থামবে।
নিরাপত্তায় থাকছে পুলিশ
রেলওয়ের মহাপরিচালক বলেন, ইজতেমা উপলক্ষ্যে ঢাকা থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত সব স্টেশনে আইন শৃঙ্খলা রক্ষার সুবিধার্থে পুলিশ এবং রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হবে। টঙ্গী, জয়দেবপুর, ঢাকা, ঢাকা বিমানবন্দর, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে সিসি ক্যামেরাগুলো কার্যকর রাখা হবে। টঙ্গী স্টেশনে অতিরিক্ত সিসি ক্যামেরা সংযোজন করা হবে। ইজতেমা শুরুর তিন দিন আগে থেকে আখেরি মোনাজাত পর্যন্ত নির্দিষ্ট এলাকা (নারায়ণগঞ্জ থেকে ময়মনসিংহ, আখাউড়া ও টাঙ্গাইল পর্যন্ত) ট্র্যাক ও ব্রিজ পেট্রোলিং করা হবে।
তিনি বলেন: ফায়ার সার্ভিসের একটি দলকে ইজতেমা চলাকালীন সার্বক্ষণিক টঙ্গী স্টেশন এলাকায় নিয়োজিত রাখার জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে।বিশ্ব ইজতেমা চলাকালীন সময়ে যে কোন ধরনের দুর্ঘটনা মোকাবিলার জন্য টঙ্গী স্টেশনে একটি হাইড্রোলিক টুল-ভ্যান এবং ঢাকায় রিলিফ ট্রেন সদা প্রস্তুত রাখা হবে। ইজতেমা চলাকালীন সময়ে নির্দিষ্ট সময়ে ট্রেন চলাচলের বিষয়টি মনিটরিং এর জন্য টঙ্গী ও ঢাকা স্টেশনে সিওপিএস ও তাদের মনোনীত কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে মনিটরিং টিম গঠন করা হব
এছাড়াও ইজতেমা চলাকালীন জরুরি অবস্থায় যাত্রীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার জন্য টঙ্গী স্টেশনে অস্থায়ী ডিসপেনসারি স্থাপন করাসহ প্রতিদিন বাংলাদেশ রেলওয়ের একজন চিকিৎসক প্রয়োজনীয় ওষুধসহ কর্তব্যরত থাকবেন।
ইঞ্জিন ও বাফারে ভ্রমণ করা যাবে না
কামরুল আহসান বলেন: ইজতেমা শুরু থেকে বিশেষ করে আখেরি মোনাজাতের দিন ট্রেনের ছাদ থেকে ভ্রমণকারীদের নামানোর ব্যবস্থা করতে হবে। পি এ সিস্টেমের মাধ্যমে ইঞ্জিন ও বাফারে ভ্রমণ না করার জন্য যাত্রী সাধারণকে অবহিত করা হবে।যাত্রীদের টিকিট সংগ্রহের সুবিধার্থে পর্যাপ্ত সংখ্যক ভ্রাম্যমাণ টিকিট কাউন্টার থাকবে যাতে করে ঢাকা থেকে টঙ্গী ও টঙ্গী থেকে অন্যান্য রুটে ভ্রমণকারী যাত্রীরা সহজে টিকিট সংগ্রহ করতে পারেন। ইজতেমায় মুসল্লিদের ব্যবহারের জন্য টঙ্গী স্টেশনে স্থায়ী টয়লেট ছাড়াও অস্থায়ী অযুখানা ও টয়লেট নির্মাণ করা হবে। আগত মুসল্লিদের স্টেশনে নামাজ আদায় করার জন্য অস্থায়ী নামাজের কক্ষ থাকবে।
তিনি বলেন, সব আন্তঃনগর, মেইল/এক্সপ্রেস ও লোকাল ট্রেনে কোচের প্রাপ্যতা এবং যাত্রী চাহিদা অনুযায়ী যথাসম্ভব অতিরিক্ত কোচ সংযোজন করা হবে। যাত্রী সাধারণকে ট্রেন সম্পর্কে তথ্য জানানোর জন্য এবং ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ প্রতিরোধে সার্বক্ষণিক মাইকিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন রেলপথমন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর, বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) সরদার সাহাদাত আলী।