নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
আগামী ৫ বছরের জন্য বিসিসির মেয়র নির্বাচিত করতে যাচ্ছে বরিশালের নগরবাসী। সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। কোন বিপত্তি না ঘটলে রাত ১২টার ভেতরেই জানা যাবে কে হচ্ছেন নগরপিতা। প্রতীক বরাদ্দের পর গত ১৫ দিন নগরীর প্রতিটি অলিগলি চষে বেড়িয়েছেন ৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী। তবে নৌকা, লাঙ্গল, হাতপাখা ও ঘড়ি মার্কার প্রচারণাই ছিলো চোখে পড়ার মতো। নির্বাচন পূর্ব পরিস্থিতি ভালো থাকলেও গতকাল লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস, হাতপাখা প্রতীকের ফয়জুল করিম, বিএনপির ঘরোনার ঘড়ি মার্কা প্রতীকের কামরুল আহসান রূপম আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি অভিযোগ করেছেন। গতকাল সকালে প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস বলেন, শহরের হোটেল, রেস্ট হাউজ সবগুলো বহিরাগত লোকজনে ভরা। প্রশাসন বহিরাগত সরাতে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করছে না। তিনি আরও বলেন, ‘খুবই দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, দুটি গোয়েন্দা সংস্থা তারা আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে নগ্নভাবে ভোট চাইছে। তাদের সাথে রাতে আওয়ামী লীগের বন্ধুরা বিভিন্ন বস্তিতে গিয়ে বস্তি ঘেরাও করছে, সেখানে ভোটারদের টাকা দিচ্ছে। নৌকার প্রার্থী সব আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছে। গতকাল রাতেও আমি তাদেরকে মিছিল করতে দেখেছি।’ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মুফতী ফয়জুল করীম সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, ‘দেদারছে কালো টাকা ছড়িয়ে ভোটের মাঠের পরিবেশ নষ্ট করা হচ্ছে। যাদেরকে দেওয়া হচ্ছে তাদের অনেকেই বাধ্য হয়ে নিচ্ছেন টাকা। না নিলে নৌকার বিরোধী বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে।’ স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান রুপন তার প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে অভিযোগ করে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের প্রার্থী বহিরাগত নগরীতে এনে রেখেছেন। কালো টাকার ছড়াছড়ি চালাচ্ছেন। ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকা, বস্তিতে টাকার বিনিময়ে ভোট কেনার চেষ্টা করছেন। এর অসংখ্য প্রামণ, ভিডিও ফুটেজ আমাদের কাছে আছে।’ অন্যদিকে এসব অভিযোগ অস্বিকার করে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, ‘আমি মনে করি এই অভিযোগটা সম্পূর্ণ ঠিক না। বরিশাল একটা বিভাগ, এখানে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হচ্ছে। এখানে প্রশাসনিক কিছু তৎপরতা তো থাকতেই পারে। এইটা স্বাভাবিক। আমাদের বিরুদ্ধে কারও অভিযোগ থাকতেই পারে কিন্তু সেটি দায়িত্বশীলরা দেখুক তদন্ত করে।’
এদিকে এ সিটির নির্বাচনে ৩০টি ওয়ার্ডে ১২৬টি কেন্দ্রের ৮৯৪ কক্ষে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। মোট ভোটার ২ লাখ ৭৬ হাজার ২৯৮ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ৩৮ হাজার ৮০৯ জন এবং পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৩৭ হাজার ৪৮৯ জন। ভোট পর্যবেক্ষণে ১১৪৬টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। ভোটে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে চার হাজার ৪০০ পুলিশ, আনসার, এপিবিএন, র্যাব দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া ১০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবেন। সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণের লক্ষে সকল প্রস্তুতির কথা জানিয়ে রির্টানিং কর্র্মতারা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘ইতিমধ্যে সকল কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা সহ সকল সরঞ্জাম কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। আমরা সকলের সহযোগিতায় একটি শান্তিপূর্ণ নিরপেক্ষ ভোট করতে পারবো বলে আশাবাদী।’ বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সাইফুল ইসলাম বলেন,’বরিশাল সিটি নির্বাচনে কোন প্রার্থীকে আমরা চিনি না, আমরা চিনি সাধারণ মানুষকে। তারা যাকে খুশি তাকে ভোট দিবেন। এই নির্বাচনে কোন ধরনের অনিয়ম বরদাস্ত করা হবে না।’ বরিশাল সিটিতে মেয়র পদে সাত জন, ১১৮ জন সাধারণ ও ৪২ জন সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী অংশ নিয়েছেন।