নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
রাত পেরোলেই শঙ্কা একই সাথে প্রত্যাশার বিসিসির ভোট। নির্বাচনে মেয়র পদে ৪ জন দলীয় ৩ জন স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ মোট ৭ জন প্রার্থীর মধ্যে থেকে একজনকে নগরপিতা হিসাবে বেছে নিবেন প্রায় ২ লাখ ৭৪ হাজার ভোটার। প্রতীক বরাদ্দের পর সব প্রার্থীরাই ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রচারণার পাশাপাশি নগরবাসীকে উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের মনকারার চেষ্টা চালিয়েছে। নৌকা ও হাতপাখার পক্ষে শত শত কেন্দ্রীয় স্থানীয় নেতাকর্মীরা প্রচারণা চালানোর পর গত রাত থেকেই সব প্রচারণা বন্ধ রয়েছে। আলোচনায় থাকা ৩ জন প্রার্থীর মধ্যে নৌকা মার্কার প্রার্থী স্বশিক্ষিত হলেও হাতপাখা ও লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী উচ্চ শিক্ষিত। এ বিষয়ে স্থানীয় এক ভোটার নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ভোট কাকে দেব সেটা আমি বলব না। তবে আমার সমর্থন থাকবে স্থানীয় এবং সৎ, যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যাক্তির প্রতি। তিনি আরও বলেন, বড় দুটি রাজনৈতিক দলের শাসন আমরা দেখেছি। প্রার্থীদের ভাগ্য পরিবর্তন হলেও সাধারণ মানুষের ভোগান্তির কোন সুরাহা হয়নি। তাই আসন্ন নির্বাচনে আমি লোভহীন, জনসমর্থন আছে এমন ব্যাক্তিকেই বেছে নেব।এমন প্রার্থী কে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা মুসলমান। সে অনুযায়ী যিনি নিয়মিত নামাজ আদায় করা সহ ইসলামের পথে চলে তাকেই ভোট দেব।
এবারের বিসিসির নির্বাচনকে আওয়ামী লীগ ও ইসলামী আন্দোলনের জন্য মার্যাদার লড়াই হয়ে দাড়িয়েছে। কেননা বরিশালে বর্তমান মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহকে বাদ দিয়ে তার চাচা আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ (খোকন সেরনিয়াবাত)কে মনোনয়ন দেওয়ায় আওয়ামী লীগের একাংশ অনেকটাই হতোভম্ব হয়ে নির্বাচন থেকে তাদেরকে গুটিয়ে নিয়েছিলো। পক্ষান্তরে ইসলামী আন্দোলন থেকে তাদের নায়েবে আমীর শায়েখে চরমোনাই সৈয়দ মুফতী ফয়জুল করিম নিজে নির্বাচন করায় তাদের জন্যই নির্বাচনটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাড়িয়েছে। যার কারণে চরমোনাইর শত শত অনুসারী ইসলামী বক্তা ও ছাত্র সমাজ গত ১৫ দিন নগরীর এপ্রাপ্ত থেকে ওপ্রাপ্ত চষে বেড়িয়েছে। আবার খোকন সেরনিয়াবাতকেও নগরপিতার আসনে বসানোর জন্য মন্ত্রী কর্নেল জাহিদ ফারুক শামীম, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার জাহাঙ্গীর কবির নানক, বাহাউদ্দিন নাসিমসহ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের জাতীয়, আঞ্চলিক নেতৃবৃন্দসহ শত শত নেতাকর্মী গত কয়েকদিন বরিশালে অবস্থান করে নৌকার পক্ষে প্রচারণা চালানোর পরেও আওয়ামী লীগের একাংশের ভোট নৌকায় পড়বে কিনা তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। যদিও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যস্থতায় আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর সাথে তার ছোট ভাই খোকন সেরনিয়াবাতের কোলাকুলি ও একমঞ্চে থেকে নৌকায় ভোট চাওয়ার ঘটনা ঘটে। কিন্তু সাদিক আব্দুল্লাহ মনোনয়ন না পাওয়ার পর থেকেই নগরীতে অনুপস্থিত থাকায় তার অনুসারীরা আদৌ নৌকায় ভোট দিবে কিনা তা নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন। ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে নৌকার প্রচারণায় নেমে হাতপাখার পক্ষে ভোট চেয়েছেন বলে এমন তথ্যে নিয়ে সংবাদ ভাইরালও হয়েছে। এদিকে প্রতিদ্বনদ্বী ৩ প্রার্থীই বিএনপির ভোটের দিকে তাকিয়ে। কেননা নগরীতে প্রায় অর্ধেক ভোটই বিএনপির বলে চাউর রয়েছে। বিএনপির ভোট টানার ক্ষেত্রে হাতপাখার প্রার্থী নিজেদেরকে প্রথম দাবিদার বলে আকার ইঙ্গিতে বিভিন্ন সভায় উত্থাপন করেছেন। তাদের মতে ইসলামী ভাবাদর্শের বিএনপির ভোট কোনমতেই নৌকায় যাবে না। সেক্ষেত্রে তারা অবশ্যই হাতপাখায় ভোট দিবে। নৌকার প্রার্থীও ইমাম সমিতি ও অন্যান্য ওলামায়েদের সাথে সভা করে তাদের ভোট নৌকায় দেওয়ার আহবান জানানোর পরপরই ইসলামী আন্দোলনও নগরীর ইমাম, মোয়াজ্জেম ও মুসল্লিদেরকে হাতপাখায় ভোট দেয়ার আহবান জানান। ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকজন নামা-দামি মসজিদের খতিব ও ইমামদের নেতারা হাতপাখায় ভোট দেয়ার জন্য নগরবাসীর প্রতি আহবান জানিয়েছেন বলে জানা গেছে। লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থীও বিএনপির ভোট টানার জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেছেন। সবমিলিয়ে আগামীকালের নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাতের সাথে হাতপাখার প্রার্থী সৈয়দ ফয়জুল করিমের সাথে হাড্ডাহাড্ডি আভাস রয়েছে। তবে শেষ হাসি সেই হাসবেন যার পক্ষে বিএনপির ভোট ভর করবে।