বেতাগী (বরগুনা) প্রতিনিধি:
বরগুনার বেতাগী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার এস এম মাসুদুর রহমানের বিরুদ্ধে একনায়কতান্ত্রিক আচরণের অভিযোগ উঠেছে। মাধ্যমিক উপজেলার ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা একাডেমিক সুপারভাইজার কর্তৃক আয়োজিত কৃতি শিক্ষার্থী সংবর্ধনা অনুষ্ঠান একযোগে বয়কট করেছে স্থানীয় সাংবাদিক ও রাজনৈতিক মহল। এ ঘটনায় পুরো উপজেলায় তোলপাড় সৃষ্টি হলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)।
জানা যায়, মঙ্গলবার (২৯ জুলাই ২০২৫) বেতাগী গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ ক্লাস কার্যক্রম বন্ধ দিয়ে তিনি এই কর্মসূচি’র আয়োজন করেছেন, অথচ পাশেই উপজেলা পরিষদের হলরুম ছিল। বেতাগী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ মিলনায়তনে দুই শতাধিক শিক্ষার্থীকে সম্মাননা জানানোর কথা থাকলেও শুরুতেই তা বিতর্কের জন্ম দেয়। অভিযোগ উঠেছে একাডেমিক সুপারভাইজার একক সিদ্ধান্তে এ অনুষ্ঠানে গণমাধ্যমকর্মী বা রাজনৈতিক দলের কোনো প্রতিনিধিকেই আমন্ত্রণ জানাননি।
এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে তাৎক্ষণিকভাবে অনুষ্ঠান বয়কটের ঘোষণা দেয় সাংবাদিক সংগঠনগুলো। এই সিদ্ধান্তের কারণ ব্যাখ্যা করে বেতাগী উপজেলা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মেহেদী হাসান কোয়েল সিকদার বলেন, “আমরা অনুষ্ঠানটি বয়কট করেছি কারণ তিনি কোনো সাংবাদিক সংগঠন বা রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানাননি। আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী সরকারের যে আচরণ, তিনি আজ সেই আচরণেরই পুনরাবৃত্তি করেছেন। আমাদের স্পষ্ট দাবি, এই একাডেমিক সুপারভাইজারকে অনতিবিলম্বে বেতাগী থেকে বদলি করতে হবে।”
সাংবাদিকদের এই বয়কটের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে বেতাগী প্রেসক্লাব। প্রেসক্লাবের সভাপতি আলহাজ্ব মো. কামাল হোসেন খান বলেন, “গণমাধ্যমকে পাশ কাটিয়ে কোনো সরকারি অনুষ্ঠান হতে পারে না। এটি শুধু দৃষ্টিকটূ নয়, এর পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে বলে আমরা মনে করি। এমন অগণতান্ত্রিক আচরণের প্রতিবাদে রিপোর্টার্স ইউনিটির বয়কটের সিদ্ধান্ত যৌক্তিক এবং আমরা এর সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করছি।”
একইভাবে, উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি প্রভাষক মো. শাহাদাত হোসেন মুন্না এই ঘটনাকে ‘চরম ঔদ্ধত্যপূর্ণ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। উপজেলা জামায়াতে ইমলামী সেক্রেটারি মো. শাহাদাত হোসেন বলেন,’ “সাংবাদিকদের এই সাহসী বয়কটকে আমরা স্বাগত জানাই। এটি কেবল আমন্ত্রণ না জানানোর বিষয় নয়, এটি একটি অগণতান্ত্রিক মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে গণমাধ্যম ও রাজনৈতিকবৃন্দকে আমন্ত্রন না জানানোটা চরম ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও শিষ্টাচারবহির্ভূত। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি।”
সাংবাদিকদের বয়কট করাকে সংহতি প্রকাশ করেছেন বেতাগী পৌর বিএনপির সদস্য সচিব মো. মিজানুর রহমান খান। তিনি বলেন, “আমাদেরকে কিছুই জানানো হয়নি। উপজেলা মাধ্যমিক একাডেমিক কর্মকর্তা এর আগেও দ্বিমুখী চরিত্রের আচরণ দেখিয়েছেন। আমরা এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ।”
এদিকে, অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হয়ে সার্বিক পরিস্থিতি জানার পর তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) বিপুল শিকদার। তিনি বলেন, “আমি অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার পর বিষয়টি জানতে পারি। গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক নেতাদের ছাড়া এমন একটি আয়োজন অত্যন্ত দুঃখজনক এবং এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। অভিযোগটি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে এবং তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
