ফিতনা থেকে দূরত্ব বজায় রাখা এবং কোথাও ফিতনা প্রকাশ হলে তা থেকে নিজেকে রক্ষার যথাসাধ্য চেষ্টা যারা করবে তাদের ওপর আল্লাহর রহমত ও কল্যাণ থাকবে। এর দৃষ্টান্ত হিসেবে উপস্থাপন করা যায় অসুস্থতা থেকে সুস্থতা লাভ করা ব্যক্তিকে। যিনি অসুস্থতার সমস্ত ধকল সহ্য করে বিশ্রামের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং পরবর্তী সুস্থ জীবনের জন্য রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিয়েছেন।
এ ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা আমাদের জন্য তাঁর নবীর ভাষায় একটি উপমা পেশ করেছেন।
নাওয়াস ইবনে সামআন (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা এভাবে সিরাতে মুসতাকিমের একটি উদাহরণ দিয়েছেন, রাস্তার দুই ধারে দুটো প্রাচীর। প্রাচীর দুটোতে আছে অনেকগুলো খোলা দরজা। এগুলোর সামনে পর্দা ঝোলানো রয়েছে। একজন আহ্বানকারী রাস্তার মাথায় দাঁড়িয়ে আহ্বান করছেন, অন্য এক আহ্বানকারী রাস্তায় থেকে ডাকছেন, ‘আর আল্লাহ তাআলা শান্তিময় আবাসের দিকে আহ্বান করছেন।
তিনি যাকে ইচ্ছা সোজা পথের হিদায়াত দান করেন।’ (সুরা : ইউনুস, আয়াত : ২৫)
রাস্তার দুই পাশের দরজাগুলো আল্লাহ তাআলার নির্ধারিত সীমাসমূহ। সুতরাং কোনো ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার নির্ধারিত সীমালঙ্ঘন করবে তার জন্য (দরজার) পর্দা সরে যায়। আর রাস্তায় থেকে যিনি আহ্বান করছেন তিনি হলেন আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে উপদেশদাতা! (তিরমিজি, হাদিস : ২৮৫৯)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা একটি উদাহরণ পেশ করেছেন।
তা হলো, একটি সরল সঠিক পথ রয়েছে, এর দুদিকে দুটো দেয়াল। এসব দেয়ালে উন্মুক্ত দরজা রয়েছে এবং তাতে পর্দা ঝোলানো। আর রাস্তার মাথায় একজন আহ্বায়ক, যে (লোকদের) আহ্বান করছে, ‘এসো, সোজা রাস্তা দিয়ে চলে যাও। ভুল ও বাঁকা পথে যাবে না।’ আর এ আহ্বানকারীর একটু সামনে আছে আরেকজন আহ্বানকারী।
যখনই কোনো বান্দা সে দরজাগুলোর কোনো একটি দরজা খুলতে চায়, তখনই সে তাকে ডেকে বলে, সর্বনাশ! এ দরজা খুলো না। যদি তুমি এটা খুলো তাহলে ভেতরে ঢুকে যাবে (প্রবেশ করলেই পথভ্রষ্ট হবে)।
অতঃপর তিনি এর ব্যাখ্যা করলেন, সরল-সঠিক পথের অর্থ হচ্ছে ‘ইসলাম’ (সে পথ জান্নাতে চলে যায়)। আর খোলা দরজার অর্থ হলো, ওসব জিনিস আল্লাহ তাআলা যা হারাম করেছেন এবং দরজার মধ্যে ঝোলানো পর্দার অর্থ হলো আল্লাহর নির্ধারিত সীমাসমূহ। রাস্তার মাথায় আহ্বায়ক হচ্ছে কোরআন। আর তার সামনের আহ্বায়ক হচ্ছে নসিহতকারী ফেরেশতা, যা প্রত্যেক মুমিনের অন্তরে আল্লাহর তরফ থেকে বিদ্যমান। (আহমাদ, হাদিস : ১৭১৮২)
উপরোক্ত দুটি বর্ণনা থেকে বিষয়টি স্পষ্ট যে আল্লাহ তাআলা তাঁর নির্ধারিত সীমা ও সংরক্ষিত সীমানার ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং মাকরুহের পর্দা টানিয়ে দিয়েছেন। হারাম পর্যন্ত পৌঁছতে হলে মানুষকে সেই পর্দা অতিক্রম করতে হবে। আর তখনই মানুষ ইসলামের মাকরুহ ও বর্জনীয় কার্যক্রমে লিপ্ত হয়। যখন বান্দা এই পর্দা সরিয়ে দরজা খুলে ফেলে তখন সে ফিতনা ও হারামে নিমজ্জিত হয়ে যায়। তা ছাড়া সন্দেহপূর্ণ বিষয়বস্তু ও হারামের প্রাথমিক ধাপগুলোতে শিথিলতা প্রদর্শনকারী অতি দ্রুত ফিতনায় লিপ্ত হয়ে পড়ে। তবে ফিতনা থেকে যথাসাধ্য সতর্কতা অবলম্বন করার কারণে বান্দা সর্বপ্রকার গোনাহ থেকে দূরে থাকে। পাশাপাশি যে ব্যক্তি আল্লাহর নির্ধারিত সীমানার পর্দাকে ঝুলন্ত অবস্থায়ই ছেড়ে দেবে সে ফিতনার দুর্যোগ থেকে নিরাপদ থাকবে।
মনে রাখতে হবে, শয়তান সব সময় দ্বিনের পথ থেকে বিচ্যুত করার চেষ্টায় লেগে থাকে। এ কাজে সে কখনোই বিরক্ত হয় না। কারণ যদি মানুষকে গোমরাহ করার পথে শয়তান কখনো নিরাশ হতো, তাহলে আল্লাহর প্রথম নবী ও দুনিয়ার প্রথম মানুষ হজরত আদম (আ.) অনন্তকালের জন্য জান্নাতে বসবাস করতেন, যা ছিল অসম্ভব। এমনকি অভিশপ্ত এই শয়তান মানুষকে পথভ্রষ্ট করার জন্য নিত্যনতুন চিত্তাকর্ষক কৌশল ব্যবহার করছে। বর্তমানে আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির ফলে তা বিষয়টি আরো সহজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন সাইটে যুবক-যুবতিরা অশ্লীল ভিডিও, ফোনালাপ ও পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত হচ্ছে। আর বিবাহিত নর-নারী অবৈধ প্রেম-পরকীয়ায় শেষে ফেঁসে যাচ্ছে, যার শুরুতে হয়তো কোনো মহৎ উদ্দেশ্যে কথাবার্তা চলতে থাকে কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা অসৎ কাজে পরিণত হয়।
তাইতো আল্লাহ তাআলা শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে বেঁচে থাকার জন্য আমাদের সতর্কসংকেত দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, হে ঈমানদারগণ, তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ কোরো না। যে ব্যক্তি শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে, তাকে তো শয়তান নির্লজ্জতা ও মন্দ কাজেরই আদেশ করবে। যদি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া তোমাদের প্রতি না থাকত, তবে তোমাদের কেউ কখনো পবিত্র হতে পারতে না; কিন্তু আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পবিত্র করেন। আল্লাহ সব কিছু শোনেন ও জানেন। (সুরা : নুর, আয়াত : ২১)
মহান আল্লাহ শয়তানের সব ধরনের ফিতনা থাকে আমাদের হেফাজত করুন।