রাজশাহীর পুঠিয়া থানার একটি ধর্ষণ মামলার তদন্তকাজে বিলম্ব করায় পুলিশের দুই উপপরিদর্শকের (এসআই) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজশাহীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ২-এর বিচারক মুহা. হাসানুজ্জামান এ আদেশ দিয়েছেন। চাকরিবিধি অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে তা আদালতকে অবহিত করার জন্য নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষকে এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
একই সঙ্গে মামলার নতুন তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করে মামলার তদন্তের পরবর্তী কার্যক্রম সম্পাদন করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আদেশের অনুলিপি পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি), রাজশাহীর পুলিশ সুপার (এসপি) এবং জেলার পুঠিয়া থানার ওসিসহ সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
এ দুই এসআই হলেন মো. জাহাঙ্গীর আলম ও সোহেল রানা। এর মধ্যে জাহাঙ্গীর আলম ওই মামলার প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা। তিনি রাজশাহীর তানোর থানায় বদলি হয়ে যাওয়ার পরে মামলার তদন্তভার পড়ে এসআই সোহেল রানার ওপর। তিনি পুঠিয়া থানাতেই কর্মরত আছেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ২৯ অক্টোবর ধর্ষণের শিকার হয় ৬ বছরের এক কন্যাশিশু। ওই শিশুর চাচাতো ভাইয়ের বিরুদ্ধেই ধর্ষণের অভিযোগ। ওই শিশুর চাচাত ভাইয়ের বয়সও ১৭ বছর। এ ঘটনায় গত বছরের ১ নভেম্বর ভুক্তভোগী শিশুর মা বাদী হয়ে থানায় ধর্ষণ মামলা করেন। এর পর ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত ১৭ বছরের ওই শিশুকে পুলিশ হেফাজতে নেয়। পরে আদালত তাকে যশোরের শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠান। ওই শিশু এখন সেখানেই আছে। মঙ্গলবার এই শিশুর জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।
একইসঙ্গে মামলা হওয়ার পরে ৮৯ কার্যদিবস অতিবাহিত হলেও দুই তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন আদালত। আদেশে আদালত বলেছেন, এটি একটি চাঞ্চল্যকর ধর্ষণ মামলা। মামলার পর চার মাস ৭ দিন অতিবাহিত হলেও ভিকটিমের জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়নি। নেওয়া হয়নি মেডিকেল সার্টিফিকেট।
নতুন তদন্ত কর্মকর্তা সোহেল রানা আদালতে হাজির হয়ে বলেছেন, গত সোমবার ভিকটিমের জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। এখনো মেডিকেল সার্টিফিকেট নেওয়া হয়নি।
আদেশে আদালত বলেছেন, কেন পুলিশ রিপোর্ট আসেনি সে বিষয়ে ট্রাইব্যুনালকে অবহিত করা হয়নি। ফলে মামলার বিচারকার্যে অযথা বিলম্ব এবং গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য ও আলামত ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, যা মূল মামলায় বিচার নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনাল সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে।
দুজন তদন্ত কর্মকর্তা ৮৯ কার্যদিবসেও মামলার উল্লেখযোগ্য কোনো কাজ করেননি মর্মে আদালতের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। এটি ইচ্ছাকৃতভাবে বিচারকার্যে বিঘ্ন সৃষ্টির শামিল। তাই আইনে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন না হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দুই তদন্তকারী কর্মকর্তা দায়ী বলে আদালত মনে করে। এটি তাদের অদক্ষতা ও অসদাচরণ বলে বিবেচিত।
তাই মামলা তদন্তে অযথা বিলম্ব, মেডিকেল রিপোর্ট সংগ্রহ না করা, আলামত জব্দ না করা এবং তদন্তের অন্যান্য আবশ্যকীয় কাজ করে পুলিশ রিপোর্ট যথাসময়ে আদালতে উপস্থাপন না করার জন্য তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে নতুন তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়ে তদন্ত এগিয়ে নিতে বলা হয়েছে। আর বিষয়টি তদারকি করতে বলা হয়েছে সংশ্লিষ্ট থানার আমলী আদালতকে।
জানতে চাইলে পুঠিয়া থানার ওসি ফারুক হোসেন বলেন, প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা বদলি হওয়ার পরে দ্বিতীয় তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। এখন প্রথমজনের তদন্তে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত যাচাই করতে সময় লাগে। সে কারণে হয়তো পুলিশ রিপোর্ট দেওয়া যায়নি। আর তদন্ত রিপোর্ট না পেয়ে আদালতের দেওয়া আদেশের বিষয়টি আমি এখনও জানি না। আদেশের কপি থানায় এলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে। এর পর কর্তৃপক্ষ আদেশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।