সৈয়দ বাবু,বরিশাল জেলা প্রতিনিধি।।দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতামুলক কর্মকান্ডে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বরিশাল-৪ আসন (হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ)। রোববার ভোট গ্রহণ শেষে ফলাফল ঘোষণার পর থেকেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মি আহমেদ এর সমর্থকদের ওপর একের পর এক বর্বোচরিত হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা গেছে, এই আসনের এবারও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন পংকজ নাথ। নির্বাচনী এলাকায় নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডে আওয়ামী লীগ থেকে অব্যাহতির পর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক বঞ্চিত হন তিনি। আসনটিতে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদকে নৌকা প্রতীকে মনোনীত করা হয়েছিল। যদিও দ্বৈত নাগরিকত্বে উচ্চ আদালতে আটকা পড়ে তার মনোনয়ন বৈধতা। সর্বশেষ সুপ্রিমকোর্টেও সেটি বহাল থাকায় নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি তিনি। আর নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঈগল প্রতীকে অংশ নিয়ে পূনরায় নির্বাচিত হন পংকজ নাথ। নির্বাচনে ড. শাম্মী আহমেদ এর কর্মী ও সমর্থকরা তার বিরোধীতা করায় নির্বাচিত হওয়ার পর পংকজ নাথ’র অনুসারীরা চড়াও হয়ে একের পর এক হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জের বিভিন্ন ইউনিয়নে নৌকার কর্মী সমর্থকদের মারধর করাসহ বসতঘর পুড়িয়ে দেওয়া, বসত ঘর ভাংচুর, হাত-পায়ে রগ কাটাসহ চাঁদাবাজিরমত বিভিন্ন ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছেন। এতে নৌকার কর্মী সমর্থক কমপক্ষে ২০-২৫ জন আহত হয়েছেন। আর এমন অভিযোগই করছেন দুই উপজেলার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। হামলার নির্দেশদাতা হিসাবে পংকজ নাথকেই দুষছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ। গত ৪ জানুয়ারি হিজলা উপজেলার হরিনাথপুরে স্বতন্ত্র প্রার্থী পংকজ নাথ’র সমর্থনে অনুষ্ঠিত জনসভায় পংকজ নাথ সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ঘটানোর মতো উস্কানীমূলক বক্তব্য দেন শাম্মী আহমেদের কর্মীদের বিরুদ্ধে। অভিযোগে জানা গেছে, ফলাফল ঘোষণার পর রোববার রাতে হিজলার গৌরবদি ইউনিয়নের বিশর এলাকায় শাম্মি আহমেদের এক কর্মীর হাত ভেঙ্গে দেন পঙ্কজ নাথের দুই অনুসারী। ভুক্তভুগী স্থানীয় দেলু সিকদারের ছেলে মাসুদ সিকদার। তিনি শাম্মী আহমেদের অনুসারী। হামলাকারীরা হলেন সুলতান মৌলভীর ছেলে কুদ্দুস, রুহুল আমিন। তারা নির্বাচিত সাংসদ পঙ্কজ নাথের অনুসারী। জানা গেছে, ভোট গ্রহণ শেষে পংকজ নাথের বিজয়ের ফলাফল ঘোষণার পরপর হঠাত করেই স্থানীয় মাসুদ সিকদারের ওপর হামলা চালান কুদ্দুস ও রুহুল আমিনসহ অজ্ঞাত আরও কয়েকজন । এসময় মাসুদকে লাঠিসোঠা দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে হাত ভেঙ্গে দেন তারা। পরবর্তীতে স্থানীয়দের মাধ্যমে হামলাকারীদের হাত থেকে রেহাই পান তিনি। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই হিজলার হরিনাথপুর ইউনিয়নে শাম্মী আহমেদের সমর্থকদের ওপর আরেকটি হামলা চালায় পঙ্কজ নাথের অনুসারীরা। গতকাল বেলা ১২ টার দিকে ইউনিয়নের দুই কর্মীকে কুপিয়ে-পিটিয়ে গুরুত্বর জখম করেন তারা। ভুক্তভুগীরা হলেন, ইউনিয়নের বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত জানে আলম সরদারের ছেলে আব্দুল হালিম সরদার ও স্থানীয় রিপন সরদার । হালিম সরদার হরিনাথপুর ইউনিয়নের প্রস্তাবিত স্বেচ্ছাসেবক লীগ কমিটির সভাপতি। এছাড়া রিপনকেও ঐ কমিটির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে প্রস্তাব করা হয়েছে। এদিকে হামলায় জড়িতরা হলেন, পঙ্কজ নাথ এর মদদে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের নেতৃত্ব দানকারী নজিব বাহিনী। বাহীনির মুলহোতা হলেন ফরিদ কাজীর ছেলে ফিরুজ কাজী। । তার নেতৃত্বে পংকজ নাথের অনুসারি হরিনাথপুরের শরিফ সরদারের ছেলে শাহাদাত সরদার, গনি জঈির ছেলে রাজিব জঈি ও সায়মুন জঈি , দেলু সরদারের ছেলে রিফাত সরদার, রকমাত আলী চৌকিদারের ছেলে বরকত চৌকিদার, ফকির সিকদারের ছেলে বাদল সিকদার, ফরিদ খন্দকারের ছেলে বিপ্লব খন্দকার সহ অজ্ঞাত আরও ৬/৭ জন। অভিযোগে আরও জানাগেছে, হরিনাথপুর এলাকার মধ্যে দুপুরে হালিম সরদার ও রিপন সরদার বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন। পুর্ব-পরিকল্পিত অনুযায়ী ফিরোজের নেতৃত্বে অভিযুক্তরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এসময় হালিম ও রিপনের শরীরে তারা এলোপাতাড়ি কুপিয়ে-পিটিয়ে জখম করে। এঘটনায় আহতদের মুলাদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে হালিমের অবস্থা সংকটাপন্ন বলে জানা গেছে। নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক এক নেতা বলেন, ৪ জানুয়ারি হরিনাথপুরের পংকজ নাথের সমর্থনে এক জনসভায় তিনি বলেছিলেন, যারা আমাকে সমর্থন ও ভোট দিতে যাবেনা তাদের চিহ্নিত করে রাখতে হবে । ৭ তারিখের পর তাদেরকে দেখে নিবেন বলে হুশিয়ারি দেন তিনি। তার এমন বক্তব্যর পর দুই উপজেলাবাসীর মধ্যে ভীতি সঞ্চারিত হয়। যারা আওয়ামী লীগের নৌকার অনুসারী তাদেরকেই চিহ্নিত করে তিনি এখন এমন ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনা ঘটিয়ে চলেছেন। এমন ঘটনা প্রতিরোধে তিনি সংশ্লিস্ট প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেন। এদিকে একই ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের পুর্বকান্দিতে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য ও শাম্মী আহমেদের অনুসারী লিটন প্যাদার ওপর হামলা চালায় পংকজ নাথের অনুসারীরা। এছাড়া ইউসুফ সরদার নামের শাম্মী আহমেদের এক অনুসারীকে পিটিয়ে গুরুত্বর আহত করে পঙ্কজ অনুসারীরা। তার শরীরের বিভিন্ন অংশ পিটিয়ে লক্ষাধিক টাকা ও মোবাইল লুটসহ মাথায় কুপিয়ে গুরুত্বর জখম করে অভিযুক্তরা । হামলাকারীরা হলেন- জামাল সরদারের ছেলে সুফিয়ান, পারভেজ , হাসান , ইউসুফ, হামিম । তারা পংকজ নাথের অনুসারী বলে জানা গেছে। তারা হিজলার মেমোনিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা। ইউসুফ জানান, আমি রাতে বাজারে গেলে আমার ওপর অতর্কিত হামলা চালায় অভিযুক্তরা। আমি নৌকার দল করি। আমি এর আগে বলেছিলাম শাম্মী আহমেদ সাংসদ হতে পারলে আমি গরু জবাই করে মানুষকে খাওয়াবো। এরই জের ধরে তারা আমার ওপর হামলা চালায়।
সোমবার সকালে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার উলানিয়া ইউনিয়নের বালিয়া গ্রামে বেলায়েত ফরাজি নামের আওয়ামী লীগের এক কর্মীর বাড়ীতে হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে পংকজ নাথের অনুসারীদের বিরুদ্ধে। হামলাকারীরা হলেন, আলমগীর মাতব্বর, মোর্শেদ সহ অজ্ঞাত আরও অনেকে। গতকাল সকাল ১০ টায় ঘটনাটি ঘটেছে। বেলায়েত সহ পুরুষ যারা আছেন তারা পংকজ নাথের সন্ত্রাসীদের ভয়ে দুইদিন আগেই এলাকা ছেড়েছেন। এদিন বাড়ীতে কাউকে না পেয়ে তিন নারীকে বেধরক পিটিয়ে আহত করেন তারা। আহত ঐ ৩ নারী মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন। এর আগে আলীমাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সাবেক ইউপি সদস্যর বসতঘর পুড়িয়ে দেয় স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকরা, হিজলার ধুলখোলা ইউনিয়ন পরিষদ এর চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন ঢালীর ৩টি মাছঘাট দখল, ২টি ট্রলার লুট, একটি লঞ্চঘাট দখল করে এবং তার অনুসারীদের ৪টি দোকানে হামলা ও লুটপাট চালায় পংকজ নাথ’র অনুসারী জোড়া খুনের আসামীরা। এছাড়াও রতন চন্দ্র নামের নৌকার কর্মীর বাড়িতে গিয়ে তার মাকে মারধরসহ হুমকি ও চাঁদা দাবী করার অভিযোগ। স্বতন্ত্র প্রার্থী পংকজ নাথ’র অনুসারী মেহেন্দিগঞ্জ পৌরসভার চুনারচর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মনির জমদ্দার দলবল নিয়ে নিজ হাতে পিটিয়েছেন একই এলাকার নৌকার কর্মী শাহজালাল জমদ্দার, ইব্রাহিম জমদ্দার, রাজিব পোদ্দার, তোফাজ্জল বেপারিকে। একাধিক দোকানপাট বন্ধ করে দিয়েছেন, খরকি ওয়ার্ডে একাধিক নৌকার কর্মীকে চড় থাপ্পড় মারার অভিযোগ রয়েছে। হিজলা গৌরব্দির কাকুরিয়া এলাকায় নৌকার কর্মী ইব্রাহিম মাঝিকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করে মৃত ভেবে ফেলে রেখে যান। মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা জাতীয় শ্রমিক লীগের আহবায়ক পান্নু রাঢ়ীর ছোট ভাইকে মারধর করেন। এদিকে একের পর এক হামলার এঘটনায় পুরো ভীতসন্তোস্থ হয়ে পড়েছে দুই উপজেলার মানুষ। তারা পংকজ নাথের পুনরায় বিজয়ে উল্লাসের পরিবর্তে শংকায় দিনযাপন করছেন। তারা অভিলম্বে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেন। বরিশাল -৪ আসনের শাম্মী আহমেদের ভাই ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাব আহমেদ জানান, বিভিন্ন সময়ে তার সমর্থকদের উপর হামলা করে আসছে
স্বতন্ত্র প্রার্থী পংকজ নাথ এর কর্মীরা। এরই ধারাবাহিকতায় গত দুদিনে এমন ন্যক্কারজনক হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে পংকজ নাথ’র অনুসারীরা। এ বিষয়ে বরিশাল জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ রেজওয়ান আহেমেদ, পিপিএম বলেন, কোনরকম সহিংসতার সুযোগ নেই। আমরা যেকোন ধরণের মারামারি সংঘাতের ঘটনা ঘটলে ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। মামলা নিচ্ছি। আসামী গ্রেফতারে সচেষ্ট আছি। যে ঘটনাগুলো ঘটেছে প্রত্যেকটি ঘটনায় মামলা হবে। আসামী গ্রেফতারেও অভিযান চলছে। এ বিষয়ে জানতে সাংসদ পঙ্কজ নাথের মুঠোফোনে সংযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।