ঢাকা বৃহস্পতিবার , ২০ নভেম্বর ২০২৫
আজকের সর্বশেষ সবখবর

সবার সহায়তায় তিন বেলা পেট ভরে খেতে চাচ্ছেন প্রতিবন্ধী কুলসুম

vorer angikar
নভেম্বর ২০, ২০২৫ ৮:০৭ অপরাহ্ণ
Link Copied!

আরশাদ মামুন, নিজস্ব প্রতিবেদক: শারীরিক প্রতিবন্ধী বিবি কুলসুম। প্রায় ১৭ বছর আগে বিয়ে হয় আরেক প্রতিবন্ধী মো. ফরিদের সাথে। প্রতিবন্ধী স্বামী মো. ফরিদ মানুষের সহায়তায় চালাতো সংসার। মোটামুটি কোনো রকমে চলছিল সংসার তাদের। কুলসুস ও ফরিদ দম্পতির রয়েছে ছেলে সন্তান। বর্তমানে তার বয়স ১৫ বছর। প্রায় দুই বছর আগে কুলসুমকে ও একমাত্র সন্তানকে ছেড়ে চলে যায় স্বামী ফরিদ। স্বামী কোথায় আছে জানেনা সে। শুনেছে সে ঢাকা ও চট্রগামে ভিক্ষা করে। তবে যোগাযোগ নেই স্ত্রী ও সন্তানের সঙ্গে। এলাকাবাসীর সহায়তায় চলে কুলসুমের জীবন যাপন। রক্ত শূন্যতা, অপুষ্টি, পেটে আলসার ও দুর্বলতায় ভালো করে কথা বলতে পারছে না কুলসুম। বিগত সরকারের আমলে পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডে একটি আবাসনের ঘর দেওয়া হবে বলে তাকে উপজেলা অডিটরিয়ামে নেয়া হয়। সেখানে তার হাতে একটি ফাইল দিয়ে ছবি করে ফাইলটি নিয়ে যায় কর্তৃপক্ষ। এরপর আর ঘর দেয়া হয়নি তাকে।
কুলসুমের বাসা ভোলা জেলার লালমোহন পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ড বিআরডিবি কলোনির খাল পাড়ে। খাল পাড়ের সরকারি খাস জমিতে এলাকাবাসীর সহায়তায় থাকার জায়গা হয়েছে কুলসুমের। তার ঘরের সাথেই থাকেন তার আপন ভাই তাজুল ইসলাম।
কানে ভালোভাবে শুনতে পান না কুলসুম। জোরে কথা বললে শুনতে পায় সে। কুলসুমের সাথে কথা বললে তিনি জানান, ছোট কালে আমি পুরোপুরি সুস্থ ও ভালো ছিলাম। আমার বয়স যখন ১২ বছর, তখন আমি খেলতে গিয়ে খালের মধ্যে একটি ছোট গর্তে আমার বাম পা পড়ে যায়। সেখান থেকে বাড়িতে আসলে আমার জ্বর হয়। এরপর বাম পায়ে একটি পোকা দেখা দেয়। কিছুদিন পর আমার বড়োভাই সেই ফোঁড়া থেকে জীবাণু বের করে। তখন শীতের সময় ছিলো। জীবাণু বের হওয়ার পর আমি প্রচণ্ড দুর্বল হয়ে যাই। তখন ওই দিন সকালে আমি নিজে হেঁটে মাঠে রোদের মধ্যে শুয়ে থাকি। দুপুরের বেলায় আমার মা আমাকে আনতে গেলে আমি আর হেঁটে ঘরে আসতে পারি নাই। এরপর থেকে আস্তে আস্তে আমার বাম পা অবশ হয়ে যায়। পা এখন আর সোজা করতে পারি না। বাবা মা তখন খনকার (কবিরাজ) দেখিয়েছিলো। তার বলেছিলো, উপরির সমস্যা। কিন্তু অনেক চেষ্টার পরও আমার পা আর ভালো হয়নি। এরপর আমি পঙ্গু হয়ে যায় এবং হাতে পিঁড়ি নিয়ে বসে বসেই হাঁটি এবং সব কাজ করি। প্রায় ১৭ বছর আগে বাবা মা আমাকে এলাকার মো. ফরিদের সাথে বিয়ে দেন। ফরিদের ডান পা ছিলো না। সে মানুষের সহায়তায় আমাদের সংসার চালাতো। বিয়ের পর আমাদের একটি ছেলে হয়। ছেলেটি বর্তমানে হাফেজিয়া মাদ্রাসায় পড়ে এবং তার বয়স প্রায় ১৫ বছর। প্রায় দুই বছর আগে আমার স্বামী আমাকে ছেড়ে চলে যায়। কোনো খোঁজ খবর নেই। কোথায় আছে জানি না। আমি সরকারিভাবে পঙ্গু ভাতা পাই। আমি এখন এই এলাকার মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সহায়তা করে খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছি। বর্তমানে অসুস্থ। রক্ত শূন্যতা, দাঁতে দাঁতে, শরীর কাপা, পেটের ব্যথা, আলসারসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছি। এর আগে একবার পীড়া, হয়ে এলাকাবাসীর সহায়তায় লালমোহন হাসপাতাল ও ভোলা হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছি। এখন আবার অসুস্থ হয়ে পড়ে আছি। অসুস্থ ভাত খেতে ঠিকমতো ডাক্তার দেখাবে পারি না, কীভাবে। আমি সহায়তায় সুস্থ হয়ে বাঁচতে চায়। তিন বেলা একটু পেট ভরে ভাত খেতে চায়।
কুলসুম আরো জানান, বিগত সরকারের শেষ সময়ে আমাকে পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের আবাসনে একটি ঘর দেয়। উপজেলা অডিটরিয়ামে আমি সহ কয়েকজনকে একটি করে ফাইল প্রদান করে (ফাইলের মধ্যে দলিল ও অনেক কাগজপত্র ছিল) সকলেই মিলে ছবি করে। ছবি করার পর আমাদের সকলেল কাছ থেকে ফাইলগুলো নিয়ে যায়। তারা বলেছে পরে আমাদেরকে ফাইল (দলিলপত্রসহ) ও ঘর বুঝিয়ে দেয়া হবে। আমাকে আর ঘর দেয়া হয়নি। শুনেছি আমার নামের ঘরে অন্য আরেকজনকে দিয়ে দিয়েছে।
ওই এলাকার মো. মানিক, মিনারা বেগম ও রাশিদা বেগম বলেন, কুলসুম সকলের সহায়তায় চলছে। এই এলাকার সকলেই তাকে চিনে এবং তার অবস্থা সম্পর্কে জানে। যে যা পারে তাকে সহায়তা করছে। কুলসুমকে দ্রুত ভালো ডাক্তার দেখানো দরকার। এজন্য দেশের বিত্তবান ব্যক্তিরা যদি এগিয়ে আসেন তাহলে ও সুস্থ হয়ে ভালোভাবে বাঁচতে পারবে।
কুলসুমকে সহায়তার জন্য তার ব্যবহৃত ০১৩১৫০৩০৫১৬ নাম্বারে যোগাযোগ করতে পারেন।
এ ব্যাপারে লালমোহন উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মাসুদ বলেন, ওনি যেহেতু পঙ্গু ভাতা পাই তাই সরকারি নিয়ম অনুযায়ী অন্য কোনা ভাতা/সহায়তা দেয়া সম্ভব নয়। তবে যেহেতু তিনি অসুস্থ। তাই লালমোহন হাসপাতালে ভর্তি হলে ওনার যাবতীয় ওষুধসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা হাসপাতালের সমাজসেবা কমিটি থেকে নিতে পারবেন।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।