ঢাকা শুক্রবার , ২৪ মে ২০২৪
আজকের সর্বশেষ সবখবর

কুরবানির গরু মোটাতাজা করার হিড়িক

vorer angikar
মে ২৪, ২০২৪ ১১:১২ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

ব্যবহার হচ্ছে ক্ষতিকর নানা ওষুধ

আসন্ন ঈদুল আজহা ঘিরে গবাদি পশু ‘মোটাতাজা’ করতে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। তবে কোনো কোনো খামারি মোটাতাজার দিকে নজর না দিয়ে কুরবানির জন্য সুস্থসবল গরু প্রস্তুত করছেন। কয়েক বছর ধরে মোটাতাজা গরুর বিষয়ে ক্রেতাদের সচেতনতা তৈরি হতে দেখা গেছে। অতি স্বাস্থ্যবান বেশকিছু গরু বিক্রি হয়নি। বিক্রি না হওয়া এসব গরু খামারে ফেরত নিয়ে যাওয়া হয়েছে। হাট ও খামারে আনা-নেওয়ায় অনেক গরু অসুস্থ হয়ে পড়ে। কয়েকটি গরু মারাও যায়। এমন অবস্থায় সারা দেশে কুরবানিযোগ্য প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ পশু প্রস্তুত রাখা হচ্ছে, যা গত বছরের চেয়ে সাড়ে চার লাখ বেশি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উন্নত গুণমান এবং বেশকিছু বৈশিষ্ট্যের জন্য দেশি গরুর কদর দিনদিন বাড়ছে। অতি মোটা ও তাজা গরু কেনায় অনেকের চাহিদা থাকলেও সেটি দিনদিন কমে আসছে। সবাই দেশি ও সুস্থ গবাদি পশু কিনতে চাচ্ছেন। খোদ খামারিরাই বলছেন, কয়েক বছর ধরে দেশি গরুর কদর বেশি। বিদেশি কিংবা অতি মোটাতাজা গরুর কদর দিনদিন কমছে।

আবুল হাশেম নামে মাগুরার এক খামারি জানান, একসময় অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন বিদেশি জাতের গরু দিয়ে খামার শুরু করেন। বিদেশি গরু প্রায় শতভাগ তৈরিকৃত খাবার খায়। এক যুগ আগের পশুখাদ্যের দাম বর্তমানে ২-৩ গুণ বেড়েছে। তাছাড়া এসব পশুর কদর কমতে থাকায় এখন দেশীয় গরু দিয়ে ব্যবসা করছেন। স্বাস্থ্যবান দেশি গরুর চাহিদাও বেশ ভালো। যে কোনো পরিবেশে টিকে থাকতে পারে গরম কিংবা হাটবাজারে। এছাড়া বিদেশি গরুর চেয়ে দেশি গরুর দাম বেশি। মাংসের গুণগতমানও ভালো। তবে বিদেশি গরুরও কিছু চাহিদা রয়েছে। এসব গরু পোলট্রির মতো লালনপালন করা হয়। নির্ধারিত ঘরে পাখার নিচে মাসের পর মাস রাখা হয়। গরম কিংবা বাইরের পরিবেশে এরা খুব একটা সুস্থ থাকে না।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুরবানির ঈদ সামনে রেখে একশ্রেণির খামারি দ্রুত সময়ের মধ্যে পশু মোটাতাজা করেন। অসাধু খামারিরা ক্ষতিকর ও গবাদি পশুর জন্য নিষিদ্ধ স্টেরয়েড গ্রুপের ওষুধ-ডেকাসন, ওরাডেক্সন, প্রেডনিসোলন প্রভৃতি সেবন করিয়ে অথবা ইঞ্জেকশন দিয়ে গরু মোটাতাজা করেন। এছাড়া হরমোন (যেমন: ট্রেনবোলন, প্রোজেস্টিন, টেস্টোস্টেরন) প্রয়োগ করেও গরু মোটাতাজা করা হয়। গরু মোটাতাজাকরণের জন্য আনা এসব অবৈধ ওষুধের চালানও সীমান্তে বিজিবির অভিযানে জব্দ হচ্ছে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, দেশি গবাদি পশুর কোনো বিকল্প নেই। দেশি গরুর মাংসের গুণমান উন্নত এবং বেশকিছু বৈশিষ্ট্যের জন্য এর কদর বিশ্বজুড়েই। মানুষ সচেতন হচ্ছে। পশুর হাটে গিয়ে দেখেশুনে পশু কিনছেন। যারা খামারি, তাদের মধ্যেও সচেতনতা আসছে। ওষুধের মাধ্যমে পশু মোটাতাজাকরণ ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের জন্য ক্ষতিকর। তবে উন্নত জাতের গরুর প্রয়োজন রয়েছে। আমরা আমেরিকা, ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে উন্নত-বড় জাতের গবাদি পশু এনে বিশেষ মাধ্যমে দেশি জাতের পশু উৎপাদন করছি। যেখানে অকারণে ওষুধ দিয়ে সেই পশুকে মোটাতাজা কিংবা বড় করা হচ্ছে না। দেশি গরুর মতো আরও শক্তিশালী-বড় আকারের গরু উৎপাদনে আমরা সফল হচ্ছি। শুধু গরু নয়, ভারত থেকে উন্নতমানের মহিষও আমরা দেশে এনে বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করে দেশি মহিষ উৎপাদন করছি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কয়েক বছর আগেও ভারত ও মিয়ানমার থেকে আমদানিকৃত গরু দিয়েই মিটত দেশের মাংসের চাহিদা। প্রতিবছর কুরবানির সময় দেশ দুটি থেকে আমদানি হতো ২২-২৫ লাখ গবাদি পশু। কিন্তু সেই নির্ভরতা কমিয়ে এখন স্বয়ম্ভরতার পথে বাংলাদেশ। ২০১৪ সালে ভারতের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের গোরক্ষা নীতির ফল হিসাবে দেশটি থেকে গরু আমদানিতে ভাটা পড়ে। এ প্রেক্ষাপটে গরু-ছাগলের চাহিদা মেটাতে স্বয়ম্ভরতা অর্জনের ওপর জোর দেয় বালাদেশ সরকার। বর্তমানে দেশে নিবন্ধিত খামার প্রায় ৭৫ হাজার এবং অনিবন্ধিত খামারের সংখ্যা এক লাখের বেশি। বাংলাদেশ গরু পালনে বিশ্বে দ্বাদশ অবস্থানে রয়েছে।

কৃত্রিমভাবে মোটা করা গরুর মাংস মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর-জানালেন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মো. তৌফিকুর রহমান ফারুক। তবে বেশির ভাগ সাধারণ গৃহস্থ কোনটি প্রাকৃতিক আর কোনটি কৃত্রিমভাবে মোটাতাজা করা হয়েছে, তা বুঝতে পারেন না।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।